কিছু কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো Redox এবং Non-Redox শ্রেণিবিভাগ এর মধ্যে পড়ে না। নিচে কিছু বিশেষ ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া আলোচনা করা হলো।
আর্দ্র বিশ্লেষণ বিক্রিয়া বা পানি বিশ্লেষণ (Hydrolysis) বিক্রিয়া
কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক হিসেবে পানি অন্য কোনো যৌগের সাথে বিক্রিয়া করে উৎপাদ উৎপন্ন করলে তাকে আর্দ্র বিশ্লেষণ বা পানি বিশ্লেষণ বিক্রিয়া বলে।
যেমন: SiCl4 + H2O Si(OH)4 + 4HCl
এখানে SiCl4 এবং H2O বিক্রিয়া করছে। অতএব, এটি আর্দ্র বিশ্লেষণ বিক্রিয়া। আর্দ্র বিশ্লেষণ বিক্রিয়ায় অনেক সময় অস্বচ্ছ দ্রবণীয় যৌগ উৎপন্ন করে। সেক্ষেত্রে বিক্রিয়াটি অধঃক্ষেপণ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। নিম্নের বিক্রিয়াকে আর্দ্র বিশ্লেষণ বিক্রিয়াও বলা যায় আবার অধঃক্ষেপণ বিক্রিয়াও বলা যায়।
যেমন:
AlCl3(s) + 3H2O (1) → Al(OH),(s) + 3HCl(aq)
এখানে, Al(OH)3, পানিতে অদ্রবণীয়।
পানিযোজন (Hydration) বিক্রিয়া
অনেক সময় দেখা যায়, আয়নিক যৌগগুলো কেলাস বা স্ফটিক গঠনের জন্য এক বা একাধিক পানির অণুর সাথে যুক্ত হয়। এ ধরনের বিক্রিয়াকে পানিযোজন বিক্রিয়া বলে। যৌগগুলোর সাথে যে কয়টি পানির অণু যুক্ত হয় তাদেরকে কেলাস পানি বলে। যেমন: কপার সালফেট (CuSO4) এর সাথে 5 অণু পানি (5H2O) যুক্ত হয়ে পেন্টা হাইড্রেট কপার সালফেট (CuSO4.5H2O) উৎপন্ন হয়।
CuSO4 + 5H2O CuSO4.5H2O (পেন্টা হাইড্রেট কপার সালফেট)
পানিযোজন বিক্রিয়া মূলত সংযোজন বিক্রিয়ার মতো। তবে সংযোজন বিক্রিয়ায় ইলেকট্রনের আদান- প্রদান ঘটে কিন্তু পানিযোজনে ইলেকট্রনের আদান-প্রদান ঘটে না৷
সমানুকরণ (Isomerisation) বিক্রিয়া: যদি দুটি যৌগের আণবিক সংকেত একই থাকে কিন্তু গাঠনিক সংকেত ভিন্ন হয় তবে তাদেরকে পরস্পরের সমানু বলা হয়। একটি সমানু থেকে অপর একটি সমানু তৈরির প্রক্রিয়াকে সমানুকরণ বিক্রিয়া বলে৷ যেমন, H4N2CO আণবিক সংকেত দ্বারা ভিন্ন গাঠনিক সংকেত বিশিষ্ট দুটি যৌগকে প্রকাশ করা হয়। যৌগ দুটি হলো: NH4CNO (অ্যামোনিয়াম সায়ানেট) ও ইউরিয়া (H2N-CO-NH2)। এরা পরস্পরের সমানু। অ্যামোনিয়াম সায়ানেটকে তাপ দিলে তা ইউরিয়াতে পরিণত হয়।
তাপ
NH4CNO H2N-CO-NH2
পলিমারকরণ (Polymerization) বিক্রিয়া
প্রভাবক, উচ্চ চাপ ও তাপের প্রভাবে যখন এক বা একাধিক যৌগের অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে একটি বৃহদাকার অণু তৈরি করে তখন তাকে পলিমারকরণ বিক্রিয়া বলে। এক্ষেত্রে বৃহদাকার অণুটিকে পলিমার অণু এবং ক্ষুদ্র অণুটিকে মনোমার অণু বলা হয়। যে বিক্রিয়ায় অসংখ্য মনোমার থেকে পলিমার উৎপন্ন হয় তাকে পলিমারকরণ বিক্রিয়া বলে। 1200 atm চাপে 200 °C তাপমাত্রায় ও O2 প্রভাবকের উপস্থিতিতে ইথিলিনের অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু যুক্ত হয়ে বৃহৎ পলিমার অণু পলিথিন উৎপন্ন করে। এ বিক্রিয়া হচ্ছে ইথিলিনের পলিমারকরণ বিক্রিয়া। এখানে ইথিলিন মনোমার এবং পলিথিন পলিমার অণু হিসেবে বিবেচিত। এখানে n দ্বারা ইথিলিনের অসংখ্য অণুর সংখ্যা বোঝায়।
O2
n(CH2=CH2) ইথিলিন (-CH2-CH2-)n পলিথিন
200°C, 1200 atm
আরও দেখুন...